Rang Tulir Satyajit

Share:

Srijaner Podaboli (Bengali Podcast)

Society & Culture


সত্যজিতের ছবি, শক্তির পদ্য লিটল ম্যাগাজিনের লেখা অনবদ্য কবীর সুমন যখন সত্যজিতের ছবি বলছেন বা আমরাও সত্যজিৎ রায়ের কথা ভাবছি, সবার প্রথমে ওনার ছায়াছবির কথাই মনে পড়ে। তারপর লেখক সত্যজিৎ। কিন্তু ওনার আঁকা দারুন সব ইলাস্ট্রেশন !! সেটা কজনের মনে পড়ে ? আজ রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের এই বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটির তুলনামূলক কম আলোচিত দিক নিয়ে আমি সৃজন, আমার এই পডকাস্ট, সৃজনের পডাবলীতে, আড্ডা দেব আপনার সাথে । তবে এই আড্ডা হবে মূলত শ্রী দেবাশীষ দেবের লেখা,  সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত "রং তুলির সত্যজিৎ" এই বইয়ের উপর ভিত্তি করে। সত্যজিৎ রায় নিজের কর্মজীবন কোন পেশায় শুরু করেছিলেন জানেন ? একজন পেশাদার আঁকিয়ে হিসাবে । যদিও পথের পাঁচালির পর চিত্রপরিচালক পরিচয়টা বাকি সব কিছুকে ঢেকে দেয় ।  ছবি আঁকার গুণটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া । দাদু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও বাবা সুকুমার দুজনেই পেন্টার এবং ইলাস্ট্রেটর হিসাবে পারদর্শী ছিলেন । 1940 সালে সত্যজিৎ ,শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ভর্তি হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইকনমিক্সে গ্র্যাজুয়েশন করার পর। যদিও চার বছরের এই কোর্সের আড়াই বছর যাওয়ার পর ছেড়ে চলে এসেছিলেন কলকাতায় । তার কিছুদিন পরে 1943তে advertising agency ডি.জে কিমারে যোগ দেন জুনিয়র আর্টিস্ট হিসাবে । এই কম্পানির ম্যানেজার দিলীপ কুমার গুপ্ত, যিনি ডি.কে নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি চালু করেন প্রকাশনা সংস্থা - সিগনেট প্রেস। সিগনেটের অনেক অনেক কাজের মধ্যে একটা ছিল "আম আঁটির ভেঁপু" । এই আম আঁটির ভেঁপুর ইলাস্ট্রেশন করতে করতেই মাথায় আসে পথের পাঁচালির । যে ছবি মুক্তি পায় 1955 এ। তারপর তো বাকিটা ইতিহাস। সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই ছেড়ে দিয়েছেন বিজ্ঞাপন সংস্থার চাকরি। 1961 তিনি  ফিরিয়ে আনেন বন্ধ হয়ে যাওয়া মাসিক পত্রিকা সন্দেশ । তাই সিনেমার পোস্টার, বুকলেট, টাইটেল কার্ড এসবের পাশাপাশি কভার, ইলাস্ট্রেশন, লোগো, লেটারিং এসবেও তাকে বেশ ভালো ভাবেই পাওয়া গেল । রঙ তুলির সত্যজিৎ এই বইতে চারটে চ্যাপ্টার আছে - প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ, অক্ষর শিল্প, সিনেমার নেপথ্যে।  সত্যজিতের প্রথম প্রকাশিত ডিজাইন ছিল তার বাবা, সুকুমার রায়ের পাগলা দাশুর প্রচ্ছদ। মনে রাখতে হবে পাগলা দাশু কিন্তু সুকুমারের জীবদ্দশায় প্রকাশ পায়নি। সেটা 1940 সাল । সত্যজিৎ তখন সবে কলা ভবনে ভর্তি হয়েছেন ।  এরপর দিলীপ কুমার গুপ্তর সিগনেট প্রেস এবং তারপরে আরও অনেক প্রকাশনা সংস্থার হয়ে প্রচ্ছদ এবং ইলাস্ট্রেশন । তবে সেরা কাজ গুলো বেশিরভাগই বোধহয় সিগনেটের বইগুলোতে দেখা যায়। আমরা যারা সিগনেটের জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন বা রূপসী বাংলা পড়েছি, কতজন খেয়াল করেছি যে এই কালজয়ী বইগুলোর প্রচ্ছদ সত্যজিতের করা। ইন ফ্যাক্ট , এই দুটো বইয়ের টাইটেল পেজেও তুলির সামান্য আঁচড়ে পুরো একটা বই সম্পর্কে ধারনা করে দেওয়া যায়, সেটা তিনি দেখিয়েছেন । এছাড়াও উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, লীলা মজুমদার সহ আরো অনেকের বইতেই প্রচ্ছদ তাঁর করা। এর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য জিম করবেটের লেখার অনুবাদ কুমায়ুনের মানুষখেকো বাঘ । বাঘের গায়ে গুলি লাগলে যেমন হয়, তেমন ভাবে ডোরাকাটার মধ্যে গুলি এক দিক দিয়ে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বেরিয়েছে এটা প্রচ্ছদে দারুন ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে একটা সময়ের পরে , যখন সিনেমা আর লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ওনার করা কভার মূলত দেখা যেতে লাগল ওনার নিজের বইগুলোতে - ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু আর সন্দেশ । রঙ তুলির সত্যজিৎ - এই বইতে খুব ডিটেলে বলা আছে এটা নিয়ে । বইয়ের পরের চ্যাপ্টার অলঙ্করণ । আমরা যারা ছোট থেকে সত্যজিতের বই পড়ে অভ্যস্ত, আমরা জানি পাতায় পাতায় ওনার আঁকা ছবি, গল্পটা ভিসুয়ালাইজ করতে কতটা সাহায্য করে । সত্যজিৎ নিজেকে পেন্টারের বদলে ইলাস্ট্রেটর হিসাবে ভাবতেই পছন্দ করতেন । সিগনেটের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজই ওনার করা। সুকুমার আর উপেন্দ্রকিশোরের বইগুলোতে অনেক সময়েই মূল আকার সাথে সাযুজ্য রেখে নিজের স্বকীয়তা সৃষ্টি করেছেন। আবার যদি জটায়ুকে দেখা যায়, সোনার কেল্লা সিনেমা বানানোর আগের জটায়ু আর পরের জটায়ুর ইলাস্ট্রেশনে পরিবর্তন খুব সহজেই চোখে পড়ে । পরের জটায়ু অনেক বেশি সন্তোষ দত্ত ঘেঁষা । তবে ফেলুদার ইলাস্ট্রেশনে কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আদল খুব একটা পাওয়া যায় না। এছাড়াও ওনার আঁকায় , কলমের আঁচড়ের দক্ষতায় , আলো আঁধারি খুব চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে । আনন্দমেলায় শঙ্কুর জন্য অনেক রঙিন ইলাস্ট্রেশন ও করেছেন উনি। বইয়ের পরের চ্যাপ্টার অক্ষর শিল্প। দেশ পত্রিকা থেকে শুরু করে নন্দন সব লোগোতেই ওনার ক্যালিগ্রাফির দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায় । সন্দেশ বা এক্ষনের মতন পত্রিকাই হোক বা ওনার নিজের গল্পের বই । শান্তিনিকেতনে বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাছে শেখা ক্যালিগ্রাফির সফল প্রয়োগ করেছেন বারবার । যেগুলো সেই সময়ে ছাপা হওয়া কবিতার বইগুলোকে নিয়ে ... --- Send in a voice message: https://podcasters.spotify.com/pod/show/srijaner-podaboli/message