Society & Culture
প্রেম বোধ/বোধিসত্ত্ব মাইতি পল্লব এখন অনেক কিছুই শিখেছে, অনেক কিছু বোঝে। দেখেছে আবেগ - প্রেম, হ্যাঁ সব কিছুই।এখন আর কাউকেই বিশ্বাসকরতে পারেনা। এমন কি মাঝে মধ্যে নিজেকেও না ! নিজেকে সবসময় একটু বেশী সাবধানে রাখতে চায়। কোন নতুন ভুলে আর পা দিতে চায় না সে।একদিন পার্কের পাশে পরিচয় হয়েছিলো শ্রাবণীর সাথে। কোটিপতি বাবার একমাত্র কন্যা! হাতে একটা বড়ো সাইজের কুকুরের চেন ধরে ঘোরাতে বেরিয়ে ছিল, কুকুরটির নাম ভুলু। ওই সময় কুকুর টা রাস্তার একটা কুকুর দেখে রেগে গর্জন করে দৌড় দিল। শ্রাবণী ভুলু ভুলু করে চিৎকার করে ছুটতে শুরু করলো, পারলো না ভুলু কে ধরতে, কাঁদতে শুরু করলো শ্রাবণী ভুলু ভুলু করে। এদিকে পল্লব এর ডাক নাম ও ভুলু। তাই পল্লব ঘুরে তাকালো। বেশ কিছুটা ছুটে গিয়ে কুকুর টিকে ধরে এনে দিল। খুশি হলো শ্রাবণী। পল্লব কে শ্রাবণী ধন্যবাদ দিল, নাম জানতে চাইলো, কোথায় থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। পল্লব এর সাথে পরিচয় এভাবে। তারপর তিন চার বছর স্বপ্নেরমতো। সব বন্ধুরা ওকে খুব ঈর্ষা করতো। শ্রাবণী প্রায় প্রতিদিনই স্কুটি নিয়ে পল্লবের বাড়ির সামনে আসতো। পল্লব তখন ভালো জামা-প্যান্ট পরে গায়ে ভালো সেন্ট মেরে বন্ধুদের সামনে দিয়ে শ্রাবণীর স্কুটি করে বেড়াতে চলে যেতো। তখন আঁড়চোখে তাকিয়ে থাকা বন্ধুদের দেখে নিজেকে একজন বিরাট বিত্তশালী ভাবতো। এত ভালো স্টুডেন্ট পাড়াশুনার তো প্রায় দফারফা হয়েগেল, এবার এক্সাম এ কোনো রকম মাথায় মাথায় পাশ করেছে, সবাই ছি ছি করছে।বন্ধুরা সবাই বুঝতে পেরেছিলো ভেতরে কিছু একটা হচ্ছে । সবাই আরো নিশ্চিত হলো, যখন প্রাইভেট টিউটর পল্লবের খারাপ রেজাল্টের ব্যাপারে কথা বলতে গেল, মাস্টার মশাই এর সাথে বিশ্রীভাবে কথা বললো। বন্ধু বান্ধবীরা সবাই খারাপ নজরে দেখতে শুরু করলো, দুরত্ব বজায় রেখে চলতে শুরু করলো।অল্প সময়ের মধ্যে দুজনে বন্ধু থেকে আরো আপন হতে শুরু করলো। আজ এই রেস্টূরেন্ট, কাল ওই পার্ক, পরদিন কোনো নদীর পাড়ে নির্জন ঝাউবন। হাতে হাত ধরা থেকে শুরু করে, শারীরিক স্পর্শের আনন্দ টুকু উপভোগ করতে শুরু করলো। সব ছেড়ে এটাই ওদের কাছে বড়ো হয়ে উঠলো।এক অচেনা অনুভুতি, একটু উষ্ণ আবেশ গুলো দুজনের উপভোগ, এই ভাবে জৈবিক চাহিদা গুলো বৃদ্ধি হতে হতে শ্রাবণী একেবারে পল্লবকে ছাড়া উন্মাদ আচরন শুরু করলো। এদিকে দুজের বাড়িতে এ বিষয় নিয়ে জানাজানি হলো।শ্রাবণীর বাবা বেশি দেরি না করে মেয়েকে বিদেশ এ পড়তে পাঠানোর বন্দবস্ত করে ফেললো। শ্রাবণী পাগলীর মতো আচরণ শুরু করলো। কিছুতে সে তার দেশের বাড়ি, আর তার পল্লব কে ছেড়ে যেতে চাইছে না। কিন্তুু বাড়ির কেউ তার কোনো কথার মূল্য দিচ্ছে না।পল্লব বড়ো নিরুপায় আজ। আজ রাতের উড়ান এ তার প্রিয়া শ্রাবণীর বিদেশ যাত্রা। সন্ধ্যে থেকে বিমান বন্দর এ শেষ দেখার টুকুর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলো পল্লব। অবশেষে শ্রাবণীর হাত ধরে টানতে টানতে তার মা নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে পল্লব দাড়িয়ে আছে, সেখানে এসে দেখা মাত্র মার হাত ছাড়িয়ে এক দৌড়ে পল্লব এর কাছে এলো শ্রাবণী। এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পরলো পল্লব এর বুকে, দুজন দুজন কে জড়িয়ে ধরে শেষ বিয়াগন্তক কান্নাটা কাঁদতে শুরু করলো দুজনে। শ্রাবণীর মা বাবা দুজন এসে জোর করে শ্রাবণী কে ছড়িয়ে নিয়ে, চলে যেতে উদ্যোগ নিলো। পিছু ফিরে শ্রাবণী চিৎকার করে বলল, "পল্লব আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো, তুমি ও কোরো। জীবনের শেষ দিনে হলেও আমি ফিরে আসবো তোমার কাছে, তোমার বুকে।" হাত নেড়ে বিদায় জানালো জলে ভেজা ঝাপসা চোখে।আস্তে আস্তে করে চলে গেল,মিলিয়ে গেল শ্রাবণী। পল্লব পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখের জলের শেষ বিন্দু টুকু মুছলো। এক পা দু পা করে টলমলে পায়ে রাস্তায় হাটতে শুরু করলো।